ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

সৈকতের ছাতা-চেয়ার বন্টন হাইকোর্টের নির্দেশ মতে

saikকক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য বসা ছাতা-চেয়ারগুলো বন্টন করা হবে হাইকোর্টের নির্দেশনা মতে। গত ২০১৬ সালে ১ ডিসেম্বর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অর্ধেক ছাতা-চেয়ার পর্যটকদের সুবিধার্থে বিনামূল্যে উন্মুক্ত রাখার নির্দেশনা দিলেও সংশ্লিষ্ট কিটকট ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের এই সুযোগ দিতে নারাজ ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট এই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিলেও কার্যকর ছিলনা মোটেই। ফলে লাগানো সাইনবোর্ডের সাথে বাস্তবের মিল না থাকায় কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সাথে কিটকট (ছাতা-চেয়ার) ব্যবসায়ীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে যেতো অনেক সময়। দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্টের এই নির্দেশনাকে অমান্য করায় সৈকতের এই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করে।
জানা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রায় ৫শতাধিক ছাতা-চেয়ার রয়েছে। গত ২০১৬ সালে ১ ডিসেম্বর এই ছাতা-চেয়ারগুলোর মধ্যে ৫০% ছাতা-চেয়ার পর্যটকদের বিনামূল্যে বসার জন্য নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। এবিষয়ে অবহিত করা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। ঝুলিয়ে দেয়া হয় সাইনবোর্ড। পর্যটকরা যাতে সহজে বিনামূল্যে এই ছাতা-চেয়ারগুলো সহজে চিনতে পারে তার জন্য রং করে দেয়া হয় চেয়াগুলোকে। উন্মুক্ত এসব চেয়ারগুলোকে নীল রং করেও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কিটকট ব্যবসায়ীরা কৌশলে এই রং ও সাটানো স্টীকার তুলে ফেলতেন।
কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন জানান, পর্যটকদের সুবিধার্থে বিনামূল্যে ছাতা-চেয়ার দেয়ার হাইকোর্টের এই রায় পর্যটকদের অধিকার। এই সম্পর্কিক হাইকোর্টের এই নির্দেশনা কক্সবাজার পর্যটন ব্যবস্থাকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। একিন্তু আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অসাধু ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের এই সুযোগ-সুবিধা দিতে নারাজ। যার কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস নামে। হাইকোর্টের এই নির্দেশনা অমান্যকারী কিটকট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ আশা করছি আমরা।
এদিকে এসংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনের দিক-নির্দেশনানুযায়ী বীচ-ম্যাজেম্যান্ট কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাসহ বিভিন্ন প্রকাশ্যস্থানে সাইনবোর্ড স্থাপন, উন্মুক্ত চেয়ারগুলোকে নীল রং ও লেখনীর মাধ্যমে চিহ্নিতকরণ ও পর্যটকদের অবগতির জন্য মাইকিং করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। হাইকোর্টের নিদের্শনা মতে কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের সুবিধার্থে বিনামূল্যে শতকরা ৫০ শতাংশ কিটকট (বসার জন্য ছাতা-চেয়ার) উন্মুক্ত রাখতে এ বছরের শুরু থেকে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও বীচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্র সৈকতে দু ধরনের রং দিয়ে কিটকটের চেয়ারগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। সাদা এবং নীল। সাদা রং এর চেয়ারে কেহ বসলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা তাদের ভাড়া নিতে পারবে কিন্তু নীল রং এর চেয়ার এ বসলে তার বিনিময়ে কোনরুপ ভাড়া নিতে বা দাবী করতে পারবে না। পর্যটকেরা কে কোথায় বসবে তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে এব্যাপারে ব্যবসায়ীরা মিথ্যা বা কোনরূপ চালাকি করে পর্যটকদের হয়রানি করতে পারবে না বা সৈকতে কোন ব্যবসায়ী পর্যটকদের সাথে দুর্ব্যবহার করতে পারবে না। এধরনের কাজ কেহ করলে বা ভাড়া চাইলে তা অপরাধ হিসেবে গন্য হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: আনোয়ারুল নাসের লাবনী বীচ পয়েন্ট, সুগন্ধা বীচ পয়ন্ট ও কলাতলী বীচ পয়েন্ট পরিদর্শন করেন কাজগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণে। এসময় ট্যুরিষ্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার হোসাইন মো: রায়হান কাজেমী, জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এহসান মুরাদ, একেএম লুৎফর রহমান, জুয়েল আহমেদ ও মো: সেলিম শেখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পর্যটকদের সাথে কথা বলেন। নীল রং চিহ্নিত (উন্মুক্ত) কিটকটে অবস্থানকারীদের কাছ থেকে কেহ ভাড়া নিচ্ছে কিনা জানতে চান পর্যটকদের কাছ থেকে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে যাতে পর্যটকদের হয়রানি করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি। কারো বিরুদ্ধে যদি নীল রং চিহ্নিত (উন্মুক্ত) কিটকটে অবস্থানকারীদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে বা কোনররূপভাবে পর্যটকদের হয়রানি করেছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার ব্যবসায়ী লাইসেন্স বাতিল করা হবে জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে সতর্ক করে দিয়ে আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে নতুন ডিজাইনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেখাসহ বিভিন্ন প্রকাশ্যস্থানে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি। এ সময় ট্যুরিষ্ট পুলিশের সদস্য, বীচ কর্মী ও কিটকট ব্যসায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা এ ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানান। পাশাপাশি নিজেরা এ সুযোগ ভোগ করে অন্যদেরকেও এ সুযোগ দিতে নির্দ্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বেড়াতে আসা পর্যটকরা।

পাঠকের মতামত: